সরকার পরিবর্তন হলেও পরিবর্তন হয়নি দলীয় সরকারের চেয়ারম্যান-মেম্বারদের চরিত্র

 

মোহাম্মদ আলীঃ

দেশে একটি রক্তক্ষয়ী বিপ্লবের মধ্যে দিয়ে সরকারের পরিবর্তন হলেও পরিবর্তন হয়নি দলীয় সরকারের চেয়ারম্যান মেম্বারদের চরিত্রের। তারা এখনো তেমনি আছেন আগে যেমন ছিলেন। ভূয়া প্রকল্প, প্রকল্পে নয়ছয়, নাম মাত্র কাজ করে প্রকল্পের সিংহভাগ আত্মসাৎ, নামে বেনামে ভিজিডি ও ভিজিএফ চাল আত্মসাৎ ইত্যাদি সবি চলছে আগের মতো! সামাল দিতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।


জামালপুর জেলার ৭টি উপজেলার বেশ কয়েকটি উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নে ২০২৪/২৫ অর্থবছরে চলমান টিআর কাবিখা ও কাবিটা প্রকল্পের কাজের মান এবং অগ্রগতি সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহে সরেজমিন গেলে উপরোল্লেখিত তথ্যের সত্যতা মিলেছে ।



জানা যায়, গতবছর ৫ অগাস্টের পর জামালপুর জেলার ৭টি উপজেলার দলীয় সরকার সমর্থীত বেশিরভাগ ইউপি চেয়ারম্যান আত্মগোপন করেন। গ্রেফতার বা আটক হন ৩ উপজেলার ( জামালপুর সদর, মেলান্দহ, ইসলামপুর ও দেওয়ানগঞ্জ)  কমপক্ষে ৮জন ইউপি চেয়ারম্যান। এছাড়া বেশকিছু ইউপি সদস্য। তাদের মধ্যে কেউ জামিনে ছাড়া পেলেও কেউ এখন আছেন জেলহাজতে। বাকীরা আছেন গ্রেফতার আতঙ্কে। এরপরেও পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাযনি দায়িত্বরতদের কর্মকাণ্ডে। তাদের মনে ভয় বিরাজ করলেও বন্ধ হয়নি অনিয়ম দুর্নীতি!


জামালপুর সদর উপজেলার লক্ষিরচর, তুলশিরচর, বাঁশচড়া, মেলান্দহ উপজেলার চর বানিপাকুরিয়া, কুলিয়া, দুর্মুঠ ইসলামপুর উপজেলার সদর ইউনিয়ন, নোয়ারপাড়া, বেলগাছা ও চরগোয়ালিনি ইউনিয়নে চলমান টিআর কাবিখা এবং কাবিটা প্রকল্পে ঘুরে ও প্রকল্প সভাপতি এবং এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে এসব  ইউনিয়নের কোথাও কোথাও ভূয়া প্রকল্প, কাজে নয়ছয়, কাজের নামে সিংহভাগ অর্থ আত্মসাতের আলামত পাওয়া গেছে।


প্রকল্পগুলোর মেয়াদ অনুযায়ী সময় প্রায় অতিক্রান্ত হলেও কোনো কোনো প্রকল্পে এখনো হাত লাগাইনি প্রকল্প সভাপতিরা। কোনো কোনো প্রকল্পে দেখা গেছে হাটুপানি। কোথাও খানাখন্দ। কোথাও কোথাও আবার মাটির জায়গায় ফেলা হয়েছে বালু। তাও আবার প্রলেপ সদৃশ্য । যা ভারি বর্ষণে ধুয়ে ও ধসে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।  ফলে ওইসব প্রকল্প এলাকার মানুষ যাতায়াতের ক্ষেত্রে মারাত্বক দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। চেয়ারম্যান মেম্বারদের এমন অপরিবর্তনশীল মানসিকতার প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন প্রকল্প এলাকার মানুষ ।


এছাড়া এবার ইউনিয়ন পরিষদের প্রকল্পে সভাপতি হয়েছেন, সাংবাদিক, বিএনপি নেতা ও প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিরা। এমন তথ্য স্বীকার করেছেন কতিপয় প্রকল্প সভাপতি ও ইউপি সদস্য। তারা জানান, তাদের নামে প্রকল্প চলছে অথচ তারা জানে না। আর সেই প্রকল্পের লভ্যাংশ নিচ্ছে বহিরাগতরা। যা স্থানীয় সরকার সংবিধান পরিপন্থী।


নাংলা ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ কিসমত পাশা বলেন, চেয়ারম্যান মেম্বাররা ২৪ ঘন্টা জনগণের কাজ করে। মাঝেমধ্যে মাঝরাতেও ঘুম ভেঙ্গে যেতে হয় তাদের ডাকে। কিন্তু, সে অনুযায়ী তারা সম্মানী পান না। ভাতার নামে যা পান তা ইউনিয়ন পরিষদের চৌকিদারের চাইতেও কম। এছাড়া নানা খালবিল তো আছেই।  এমতাবস্থায়, তাদের কাছ থেকে শতভাগ কাজ আদায় করতে চাওয়া অনেকটা পুকুরে বঁড়শি ফেলে সাগরের মাছ ধরতে চাওয়ার সামিল।


ইসলামপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) জামিল আহমেদ জানান, তিনি সবেমাত্র দায়িত্ব নিয়েছেন। এখনো পুরো উপজেলা চিনেই সারেননি। এই অবস্থা এই বিষয়ে মন্তব্য করা তার পক্ষে অসম্ভব। 


এব্যাপারে মেলান্দহ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, এস এম আলমগীর হোসেন বলেন, আমি আমার উপজেলার চলমান প্রকল্পগুলো বার বার পরিদর্শন করেছি। দলীয় সরকারের আমলের চাইতে বর্তমান নির্দলীয় সরকারের আমলের কাজের মান ভালো। তারপরও যাদের কাজ সন্তোষজনক নয়, তাদেরকে সতর্ক করেছি। পরবর্তীতে আদায় করে নেওয়ার চেষ্টা করেছি। এরপরেও যারা সংশোধন হয়নি তাদের অর্থ ফেরৎ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছি।

Share on Google Plus

About সাদ্দাম হোসেন

0 $type={blogger}:

Post a Comment